অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার শঙ্কায় বিশ্ব পুঁজিবাজারে পতন
বিজ নিউজ ডেস্ক : ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে ধসের আশঙ্কা দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দৈনদিন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতেও হিমশিম খাচ্ছে। নিত্যপণ্যসহ জ্বালানির দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদহার বাড়াচ্ছে। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে গত বৃহস্পতিবারের পর গতকাল শুক্রবারও আন্তর্জাতিক স্টক একচেঞ্জগুলোয় সূচকের বড় পতন লক্ষ করা গেছে। খবর: বিবিসি, গার্ডিয়ান, রয়টার্স।
বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোয় ধারাবাহিক সুদহার বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার ভয়ে গতকাল শুক্রবার এশিয়ার পুঁজিবাজারগুলো বড় পতন দিয়ে শুরু হয়েছে। আগের দিন বৃহস্পতিবারও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্ব পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছিল।
স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম (ফেড) সুদহার গত ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি করে। মূলত ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ কারণে ফেড সুদহার বৃদ্ধি করে, যা ১৯৯৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। এর পরদিন বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য, হাঙ্গেরি ও সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বৃদ্ধি করে।
নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাংকগুলো সুদহার বৃদ্ধির প্রতি নজর দিয়েছে, যদিও সুদহার বেড়ে যাওয়ায় নিন্মবিত্তের ভোগান্তি আরও বাড়বে। এসব কারণে বিনিয়োগকারীরা বিশ্ববাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বিনিয়োগ করার বদলে।
বিশ্ব পুঁজিবাজারের সূচকগুলো কয়েক মাস ধরে নিন্মমুখী অবস্থানে রয়েছে। তারপরও ফেডের সুদহার বাড়ার ঘোষণার পর গত জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিউইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিটে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। বৃহস্পতিবার এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক তিন দশমিক দুই শতাংশ কমেছে, যেখানে নাসডাকের প্রযুক্তি সূচকগুলো চার শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। আর ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়া অ্যাভারেজ সূচক দুই দশমিক চার শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়ে সূচক তিন হাজার পয়েন্টের নিচে অবস্থান করছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক এক দশমিক ছয় শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান পুঁজিবাজারে দুই শতাংশের বেশি পতন হয়েছে, যা ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রথমবারের মতো সর্বনি¤œ সূচক পয়েন্ট। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নাইকে ও এয়ারলাইসের মতো কিছু কোম্পানির ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। ফলে এসব কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে সুদহার বাড়ায় জ্বালানি কোম্পানিগুলোর চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদ্যুতিক গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার শেয়ার এরই মধ্যে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সুদহার বাড়ায় আরও শেয়ার হ্রাসের শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে এ বছর যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার সুদহার এক শতাংশ থেকে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে, যার প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে। ফলে লন্ডন একচেঞ্জে বৃহস্পতিবার এফটিএসই ১০০ সূচক তিন শতাংশের বেশি হ্রাস পায়। বিনিয়োগকারীরা পোশাকশিল্পের ব্যবসায় ধস নামার আশঙ্কার পরপরই গতকাল ব্রিটিশ অনলাইন ফ্যাশন রিটেইলার্সের বিক্রি ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পায়। কারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটিশরা বিলাসী পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে ফেডের সুদহার বৃদ্ধির পরপরই সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক এবং হাঙ্গেরির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক হাঙ্গেরি নতুন করে সুদহার নির্ধারণ করেছে। সুইজারল্যান্ডের মুদ্রা সুইস ফ্রাঙ্কেও অবনতি হয়েছে।
অন্যদিকে জার্মান সূচক ডিএএক্স তিন শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে, যেখানে ফ্রান্সের সিএসি৪০ সূচক কমেছে দুই দশমিক চার শতাংশ। আর ইউরোপের বেঞ্চমার্ক স্টক্সস ৬০০ সূচক ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সর্বনিন্ম অবস্থানে এসে পৌঁছেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী, যা এখনও চলমান। এর জেরে বিশ্বনেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েন, যার প্রভাব পড়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে। সংকুচিত হতে থাকে বিশ্ব অর্থনীতি। বাড়তে থাকে তেল-গ্যাসসহ খাদ্যপণ্যের দাম।